বাংলাদেশে পারমাণবিক সরঞ্জাম সরবরাহ করতে চায় ভারত

বাংলাদেশের পরমাণু বিদ্যুৎ কেন্দ্রের জন্য পারমাণবিক শক্তি সংক্রান্ত যন্ত্রপাতি, প্রযুক্তি ও জ্বালানি সরবরাহের সুযোগ আশা করছে ভারত৷ এজন্য ‘নিউক্লিয়ার সাপ্লাই গ্রুপ’ (এনএসজি)-র সদস্য হওয়ার চেষ্টা চালাচ্ছে দেশটি৷

গত ১ মার্চ রূপপুর কেন্দ্রে যন্ত্রপাতি সরবরাহ ও পরামর্শ সেবাসহ বিভিন্ন বিষয়ে সহযোগিতার জন্য বাংলাদেশ, রাশিয়া ও ভারত একটি ত্রি-পক্ষীয় সমঝোতা চুক্তি (এমওইউ) স্বাক্ষর করে৷ এই সমঝোতা চুক্তির আওতায় রূপপুর পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণে সহযোগিতা করবে ভারতের নিউক্লিয়ার পাওয়ার কর্পোরেশন (এনপিসিআইএল)৷ চুক্তি অনুসারে ভারত এই প্রকল্পে বিশেষজ্ঞ সেবা ও পরামর্শ দেবে৷ ভারতীয় কোম্পানিগুলো নির্মাণ কাজে যুক্ত হতে পারবে৷ এছাড়া বয়লারসহ বিভিন্ন ধরনের অপারমাণবিক যন্ত্রপাতি ও সামগ্রী সরবরাহ করবে৷

রূপপুর প্রকল্প বাস্তবায়নে ঢাকা ও মস্কোর মধ্যে ১২.৬৫ বিলিয়ন ডলারের ঋণ চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে৷ প্রকল্পের ঠিকাদার হিসেবে নিয়োগ পেয়েছে রশিয়ার অ্যাটমসট্রয় এক্সপোর্ট৷

এক হাজার ২০০ মেগাওয়াট ক্ষমতার প্রথম ইউনিট ২০২৩ সালের অক্টোবরে এবং দ্বিতীয় ইউনিট তার পরের বছর চালু হ্ওয়ার কথা রয়েছে৷ ভারতীয় সংবাদ মাধ্যম এনডিটিভি’র এক খবরে বলা হয়েছে, ‘এই চুক্তির ফলে প্রকল্পটি ভারতের জন্য আশীর্বাদ হয়ে দেখা দিতে পারে৷ বাংলাদেশের পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের জন্য পারমাণবিক শক্তি সংক্রান্ত যন্ত্রপাতি, প্রযুক্তি ও জ্বালানি সরবরাহের সুযোগ পাবে ভারত৷ ভারতীয় পারমাণবিক শক্তি সংক্রান্ত যন্ত্রপাতি, প্রযুক্তি ও জ্বালানি আন্তর্জাতিক বাজারে বিক্রির জন্য ‘নিউক্লিয়ার সাপ্লাই গ্রুপ’ (এনএসজি)-র সদস্য হতে হয়৷ ভারতের এনএসজি সদস্যপদ নেই৷ বাংলাদেশ-ভারত-রাশিয়া ত্রিপক্ষীয় চুক্তির ফলে তারা এনএসজি গ্রুপের সদস্য হতে পারবে বলে আশা করছে৷’

এনডিটিভি জানায়, বাংলাদেশের ১ হাজার ২০০ মেগাওয়াট উৎপাদন ক্ষমতা সম্পন্ন পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য পারমাণবিক চুল্লি কেনা হচ্ছে রাশিয়ার কাছ থেকে৷ ভারতের তামিলনাড়ুর কুদানকুলামে চালু থাকা পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রটিতে ব্যবহৃত প্রযুক্তিটির সঙ্গে রাশিয়ার চুল্লিটির প্রযুক্তিগত মিল অনেক৷ তাই বাংলাদেশ ও ভারত পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য এক সঙ্গে কাজ করছে৷ বাংলাদেশের পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রে কাজ করার জন্য নির্ধারিত প্রকৌশলীদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে ভারতের সহযোগিতায়৷ সব কিছু ঠিকঠাক চললে ভারত আশা করে, তারা বাংলাদেশের পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণে উপকরণ সরবরাহের সুযোগ পাবে৷

বাংলাদেশের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সচিব এম আনোয়ার হোসেন এনডিটিভিকে বলেছেন, ‘আমারা রাশিয়া ও ভারতের সঙ্গে ত্রিপক্ষীয় চুক্তি স্বাক্ষর করেছি৷ এর আগে আমরা ভারত সরকারের সঙ্গে চুক্তি করেছি৷ ভারত ভিভিইআর প্রযুক্তি ব্যবহার করে দীর্ঘদিন ধরে কুদানকুলাম পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রে বিদ্যুৎ উৎপাদন করছে৷ তাদের এ বিষয়ে অনেক অভিজ্ঞতা৷ বাংলাদেশ যেহেতু পারমাণবিক বিদ্যুৎ উৎপাদনে নবীন, সেহেতু আমরা তাদের সেই অভিজ্ঞতা থেকে শিখতে চাই৷’ রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে বাংলাদেশ ভারতে বিদ্যুৎ রফতানি করবে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি জানিয়েছেন এখনো বাংলাদেশের সেরকম কোনও পরিকল্পনা নেই, কারণ, ‘বাংলাদেশের নিজের চাহিদাই অনেক বেশি৷’

তবে এম আনোয়ার হোসেন ডয়চে ভেলেকে জানান, ‘ভারতের কাছ থেকে কোনো পারমাণবিক যন্ত্রপাতি, প্রযুক্তি বা জ্বালানি আমদানির কোনো চুক্তি হয়নি বাংলাদেশের৷ ত্রিপক্ষীয় চুক্তির আওতায় প্রয়োজন হলে আমরা শুধুমাত্র পরামর্শ সহায়তা নেবো ভারত থেকে, প্রয়োজন না হলে নয়৷ এর বেশি কিছু নয়৷

ভারত থেকে পারমাণবিক যন্ত্রপাতি বা প্রযুক্তি বা জ্বালানি আনার কোনো পরিকল্পনাও নেই বাংলাদেশের৷ ভারতও কোনো প্রস্তাব দেয়নি৷’

আর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রী ইয়াফেস ওসমান সোমবার সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, ‘ভারত, রাশিয়া ও বাংলাদেশের মধ্যে ত্রিপক্ষীয় চুক্তি হয়েছে৷ চুক্তির আওতায় ভারত আমাদের কারিগরি সহায়তা দেবে৷ ভারতের কাছে বিদ্যুৎ বিক্রি করার কোনও আগ্রহ আমাদের নেই৷ আমাদের প্রচুর বিদ্যুৎ দরকার৷’

জ্বালানি বিশেষজ্ঞ প্রকৌশলী ম ইমামুল হক ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘রূপপুর পরমাণু বিদ্যুৎ কেন্দ্রের প্রকল্প ব্যয় এরইমধ্যে তিন-চার গুণ বেড়ে গেছে৷ ফলে এই প্রকল্প যে লাভজনক হবে না সেটা স্পষ্ট৷ সরকার এর সঙ্গে জড়িয়ে গেছে৷ এখন বাংলাদেশ, রাশিয়া ও ভারত যে ত্রিপক্ষীয় চুক্তি করেছে, তাতে বাংলাদেশ একটা পাঁকের মধ্যে পড়ে গেছে৷ এখানে ব্যয়ের স্বচ্ছতা থাকবে কিনা, তা নিয়ে প্রশ্ন আছে৷ আর ভারত এখন স্বাভাবিকভাবেই চাইবে এখান থেকে কিছু ব্যবসায়িক সুবিধা নিতে৷ নির্মাণ পর্যায় পর্যন্ত এই ব্যবসা চলবে৷’

তবে তার আশঙ্কা, ‘নির্মাণ শেষ হওয়ার পর দেখা যাবে এর পরিচালনা ব্যয় অনেক বেশি৷ তখন দেখা যাবে এটা নিয়ে নতুন সিদ্ধান্ত নিতে হচ্ছে৷’